শহিদুল ইসলাম
বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষের বাকস্বাধীনতাকে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদের সভা-সমাবেশ করার অধিকারও দেওয়া হয়েছে সুস্পষ্টভাবে। ছাত্র-সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল সংবিধান মেনে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিন ধরে চলা ছাত্রদের এ আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে সে গণ অভ্যুত্থানে। এজন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হিসাব অনুযায়ী অন্তত ৬৫০ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩২ জন শিশুও রয়েছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংঘটিত এ হত্যাযজ্ঞের কথা বলেছে।মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের পালাবদল মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এখন সবার মূল দায়িত্ব হওয়া উচিত। পরিস্থিতি উত্তরণে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিস্তৃত পরিসরে তদন্তের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ জন এবং ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে আরও ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, শিশু, পথচারী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে গত জুনের মাঝামাঝি সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন স্পষ্ট করেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নৃশংসতার আশ্রয় নিয়ে পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। ছাত্র-জনতা এমন এক শাসককে আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে, তারা ক্ষমতায় থাকার যোগ্যতাও হারিয়েছিলেন সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জাতির জন্য অবশ্য করণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।