নুর আলম:
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোই স্থানীয় আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখানোর জন্য নিজ দল থেকেই নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শরীয়তপুরের এই আসনটিতে শক্ত প্রতিপক্ষ না থাকায় নিশ্চিত জয়ের সামনে দাড়িয়ে রয়েছেন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করা ইকবাল হোসেন অপু।
তার বিপরীতে আসনটিতে নির্বাচন করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকে মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মোঃ মাসুদুর রহমান, তৃনমুল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে আবুল বাশার মাদবর ও খেলাফত আন্দোলনের বটগাছ প্রতীকে মোঃ আব্দুস সামাদ।
নৌকার বিপরীতে প্রার্থী হিসেবে যারা রয়েছেন, তারা কেউ কোনো প্রচার প্রচারণাই করছেন না। শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন এবং ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে অনুরোধ করছেন।
নির্বাচনের শুরুতে আওয়ামিলীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন যেনো কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে না পারে। সেদিকে নজর রেখে আসনটিতে নামে মাত্র ক’জন প্রার্থী নির্বাচন দাড়িয়েছেন।
এরিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফার কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, কর্মী সংকটের কারণে কোনোরকমে ঈগল মার্কার প্রচার প্রচারণা করছেন তিনি নিজেই। গাছে উঠে পোস্টার টাঙানো কয়েকটি স্থীর চিত্র ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বাকিদের পোস্টার পর্যন্ত রাস্তায় নেই। এমতাবস্থায় আসনটিতে ভোটারদের মধ্যে ভোটদানের আগ্রহ হারিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
স্থানীয় ভোটারদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, এই আসনটিতে নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই। একতরফা নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের উপস্থিতি তূলনামূলক অনেক কম হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে স্থানীয় আওয়ামিলীগ। তাই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ করতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নির্দেশনা মেনে মাঠ পর্যায়ের ভোটার টানার নানা কৌশল ব্যাবহার করে চলেছেন। তাদের লক্ষ্য এখন ভোট নয় বরং ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো। তাই নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীরা।
শরীয়তপুরের গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটিতে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯০ হাজার ৪২৮ জন ও নারী ভোটার রয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৯১০ জন। এছাড়াও ১১ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে এখানে। ১৩৫ টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৭৭৮ ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হয়।
পালং জাজিরা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর -১ আসনটি জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২২১-নং আসন। স্বাধীনতার পর আসনটিতে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এ আসনে ৫ বার আওয়ামী লীগ, ১ বার বিএনপি, ২ বার জাতীয় পার্টি ও ১ বার স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে প্রহসনের (ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ) নির্বাচন এ আসনে স্থগিত ছিল। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।