শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস পুনরুদ্ধার করতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পিরোজপুরে নার্সদের একদফা দাবীতে মানববন্ধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবীতে পিরোজপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সরকারি নির্দেশ মানছেন না কেরানীগঞ্জের বদলীকৃত উপজেলা প্রকৌশলী। সম্মানহানির জন্য আইনগত ব্যাবস্হা নিবেন নুর সালাম। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা : সেনাবাহিনী কী কী করতে পারবে জলঢাকা প্রেসক্লাব এর পুনর্গঠন মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়া উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিরোজপুরে গত ২৪ ঘন্টায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, নিন্মাঞ্চল প্লাবিত পিরোজপুরে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

বিশেষ বেঞ্চে শুনানির মাধ্যমে সিনহা হত্যার মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০২৩
  • ৪৮ বার পঠিত

দিদারুল আলম – জিসান (কক্সবাজার)

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পূর্তি হয়েছে সোমবার (৩১ জুলাই)। কিন্তু এখনও তাঁর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়নি। উচ্চ আদালতে মামলার রায়ের ফাইলটি আটকে আছে। এতে হতাশ নিহত সিনহার পরিবার। মেজর সিনহার বড় বোন মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আক্ষেপ করে বলেন, “ আমার ভাই সিনহা ছিল দেশ মাতৃকার সূর্য সন্তান। দেশকে সে মায়ের মতো ভালবাসতো। আজীবন সে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন। মানুষের জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকেই নির্মমভাবে খুন হতে হলো। তাঁকে যারা হত্যা করেছে, তাঁরা কোন সন্ত্রাসী নয়, তাঁর খুনীরা ছিল শিক্ষিত পোষাক পরিহিত, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশের লেবাসধারী নরপশু।”

সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৩ টায় মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে কক্সবাজারে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের তিনি এসব কথা বলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, “সিনহার হত্যাকারীদের ফাঁসির রায়ে আমরা কিছুটা সন্তোষ্ট, কিন্তু তা পুরোপুরি নয়। অর্থবিত্ত আমরা কিছুই চাই না, আমরা শুধু চাই রায়টি দ্রুত কার্যকর করা। কিন্তু রায় হওয়ার ৫৪৬ দিন হলেও এটি হাইকোর্টে ঝুলে রয়েছে। রায়ের এক বছরেও কোন উন্নতি দেখিনি। এটি কোন সাধারণ রায় না। হাইকোর্ট বিশেষভাবে শুনানি করে রায়টি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। বিজ্ঞ আদালতের কাছে এটাই আমাদের আবেদন থাকবে। সেটা হলে রাষ্ট্রের জন্য ভাল হবে। দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে, যা দৃষ্টান্তমূলক হয়ে থাকবে। বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।”

শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার মাকে ফোন করে খোঁজখবর নিয়েছেন। তিনিও পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। তাই উনার চাইতে ভাল কেউ বুঝবে না স্বজন হারানোর যন্ত্রণা। যার কষ্ট নিয়ে আমাদের মতো তিনিও বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, রায়টি যেন বিশেষ বেঞ্চে শুনানীর মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর করা হয়। আমাদের পরিবারের এতোটুকুই চাওয়া।”

শহরের পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ সুভাষ হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নিহত মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের পরিবার ও কক্সবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য পরিবারবর্গ। এতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপে হাতে নিগৃহীত ও নির্যাতিত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

মেজর সিনহা হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা নাজনীন সরওয়ার কাবেরী, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফ্ফর হেলালী, অ্যাডভোকেট টিপু, ওসি প্রদীপের নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা ও উখিয়া কুতুপালংয়ের সাবেক মেম্বার ওসি প্রদীপ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন।

হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স ও পেপারবুক শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো মামলায় বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা অনুসারে সে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। বিচারিক আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হয়, যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসার পর ডেসপাস (আদান—প্রদান) শাখা তা গ্রহণ করে পেপারবুক শাখায় পাঠায়। পেপারবুক শাখা সেসব যাচাই—বাছাই করে পাঠায় বিজি প্রেসে। ছাপার কাজ শেষ হলে তা আবার ডেথ রেফারেন্স শাখায় পাঠানো হয়। সেখানে চূড়ান্ত যাচাই—বাছাইয়ের পর প্রস্তুত করা হয় পেপারবুক। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি হয়। ক্রম অনুসারে ২০১৭ সালের ডেথ রেফারেন্সের মামলার বিচার চলছে এসব বেঞ্চে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু মামলার শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চও গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ বলেন, ‘ক্রম অনুসারে এলে মেজর সিনহা হত্যা মামলাটি শুনানিতে উঠতে ২০২৬—২৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

সিনহা হত্যা মামলার পূর্বাপর:
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি ও রামু থানায় একটি মামলা করে। সরকারি কাজে বাধা প্রদান এবং মাদক আইনে এসব মামলা করা হয়। টেকনাফ থানায় করা দুই মামলায় নিহত সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আসামি করা হয়। আর রামু থানায় মাদক আইনে করা মামলায় আসামি করা হয় সিনহার অন্য সঙ্গী শিপ্রা দেবনাথকে। পরে নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস ২০২০ সালের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান করে ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলায় টেকনাফ মডেল থানার তখনকার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় ২ নম্বর আসামি।

আদালত এ মামলাটির পাশাপাশি পুলিশের করা তিনটি মামলার তদন্তভার দেন র‌্যাবকে। ২০২০ সালের ৬ আগস্ট মামলায় অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আরো সাত আসামিকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

২০২০ সালের ১৩ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. খাইরুল ইসলাম প্রদীপসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয় ৮৩ জনকে। একই দিন পুলিশের করা মামলা তিনটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি কনস্টেবল সাগর দেবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে পুলিশের করা তিনটি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে মামলা থেকে সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন আদালত। এরপর মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালত থেকে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ২০২১ সালের ২৭ জুন আদালত ১৫ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন।

কিন্তু করোনা মহামারির কারণে আদালতের বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ধার্য দিনে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়নি। পরে ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আট দফায় ৮৩ জনের মধ্যে ৬৫ জন এ মামলায় সাক্ষ্য দেন। গত বছর ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বরখাস্ত ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে বাকিদের খালাস দেন বিচারিক আদালত।

যাবজ্জীবন পাওয়া আসামিরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, দেহরক্ষী রুবেল শর্মা, পুলিশের সোর্স শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন। রায়ে খালাস পান বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ।

বিচারিক আদালতের রায়ের সাত দিনের মাথায় গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার যাবতীয় নথিসহ ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। আর বিচারিক আদালতের রায়ের দুই সপ্তাহের মাথায় খালাসের পাশাপাশি রায় বাতিল ও রদ চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন প্রদীপ ও লিয়াকত। পরে যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া দণ্ডিতরাও আপিল করেন

সংবাদটি শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 daily Ajker Songram
Customized By Shakil IT Park