বিনোদন প্রতিবেদক : স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে আছেন। দেশবরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক মাসুম আজিজ। ৬৯ বছর বয়সী এই অভিনেতা দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত। নতুন এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত অভিনেতা মাসুম আজিজ প্রায়ই হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। পাঁচ-ছয় দিন আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি নতুন এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। বুধবার তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। আজ (১৩ অক্টোবর) সকালে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে।’
শিল্পকলায় বিশেষ অবদান রাখায় মাসুম আজিজ ২০২২ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক পান।
১৯৫৩ সালের ২২ অক্টোবর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খাগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
১৯৭২ থেকে নাট্যচর্চা শুরু করে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন মাসুম আজিজ। ওই বছরই প্রয়াত আবু তাহেরের প্রযোজনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রাচী নাটকের একটি মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার টেলিভিশন অভিনয়ের শুরু। তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন টেলিভিশনসহ শিল্পের প্রায় প্রতিটি শাখায়।
১৯৮৫ সালে মাসুম আজিজ নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন বেতারে।
সংগীতই ছিল মাসুম আজিজের প্রথম পছন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি সাংস্কৃতিক জীবন শুরু করেন সংগীত পরিচালক হিসেবে। ঘটনাচক্রে একসময় জড়িয়ে পড়েন নাট্যচর্চায়।
মঞ্চনাটক দিয়েই তার নাট্যচর্চার শুরু। তিনি নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের সদস্য।
আশির দশকে ঢাকার মঞ্চে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য প্রযোজনায় তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—ড. জামিল আহমেদের পরিচালনায় নিকোলাই গোগোলের বিখ্যাত নাটক গভর্নমেন্ট ইন্সপেক্টরের বাংলা রূপান্তর ‘ইন্সপেক্টর জেনারেল’, ‘রাক্ষস খোক্কস’, ‘বিষাদ সিন্ধু’; এস এম সোলায়মানের রচনা ও পরিচালনায় ‘এই দেশে এই বেশে’, ‘আমিনা সুন্দরী’।
মাসুম আজিজ নির্মাতা ও নাট্যকার হিসেবেও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন। নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নাটক রচনা ও পরিচালনা করেন। ১৯৮৫ সালে তার নাটক পরিচালনা শুরু।
মাসুম আজিজের লেখা উল্লেখযোগ্য নাটক : কাকাতুয়া, ছেঁড়া তমশুক, সিন্ধু সারস, কদম আলী বয়াতি, ইতুনী, বিরস গল্প, হেলিকপ্টার, পাগলা ঘণ্টা, আবদুল কুদ্দুস—একটি অসমাপ্ত গল্পের নায়ক, বাবলা কাঠের গলুই ইত্যাদি।
২০০৪ সালে উত্তম আকাশের পরিচালনায় ‘মমতাজ’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রজগতে প্রবেশ করেন। ২০০৬ সালে প্রয়াত কাজী মোরশেদের রচনা ও পরিচালনায় ‘ঘানি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
মাসুম আজিজ সরকারি অনুদানে ‘সনাতন গল্প’ নামে তারই রচনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনুদানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প আপদ অবলম্বনে তার নাট্যরূপ ও পরিচালনায় ‘আপদ’ নাটকটি ঢাকা পদাতিক থেকে মঞ্চস্থ হয়েছে।
‘কদম আলী বয়াতি’, ‘বিরস গল্প’, ‘একজন আয়নাল লস্কর’, ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’, ‘অচিন রাগিনী’ নাটকে মাসুম আজিজের সাবলীল অভিনয় এখনো দাগ কাটে দর্শকের মনে।
মাসুম আজিজের স্ত্রী সাবিহা জামানও একজন অভিনয়শিল্পী।
ছেলে উৎস জামান বাবা-মায়ের মতো অভিনয়ের সঙ্গে জড়িত এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) স্থাপত্য বিভাগ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করেছেন। মেয়ে প্রজ্ঞা আজিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন।
২০১১ সালে প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুর রচনা ও পরিচালনায় ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত সাইলেন্ট রিভার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল মাসুম আজিজকে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার সম্মাননা দেয়। একই বছর ‘গহীনে শব্দ’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পান।