এম, এস, এ রেজা ( শুভ্র শাওন) :
শনিবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে ত্রি-বার্ষিক এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। এছাড়া প্রধান বক্তা হিসেবে থাকবেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
দীর্ঘদিন পরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। কমিটিতে স্থান পেতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী ৪২ নেতা জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জনায়, প্রায় ২৬ বছর আগে ১৯৯৬ সালে যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে সভাপতি পদে খাজা আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে খায়রুল কবির চাঁদ নির্বাচিত হন। ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০০৪ সালে সেলিম বেঙ্গলকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়। ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সম্মেলন করতে পারেনি সেই কমিটি। পরে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রাশেদুন্নবী জুয়েলকে আহ্বায়ক ও লক্ষ্মণ চন্দ্র দাস, কামরুজ্জামান শাহিন, শেখ শাদি, ডা. লুফ আরা রনি ও মামুনুর রশীদ মামুনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যের জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ বছর পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। জেলা সম্মেলনতো দূরের কথা উপজেলা পর্যায়েও কমিটি দিতে পারেনি। পরে অগঠনতান্ত্রিকভাবে যুবলীগের কমিটি পরিচালনা করার অভিযোগে জেলা যুবলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া জেলা যুবলীগের আহ্বায়ককে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়। ২০১৮ সালে মে মাসে তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ হারুন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিহাতীর এলেঙ্গার ভূঞাপুর সংযোগ সড়কের কাছে ট্রাক-পাজেরো সংঘর্ষে রাশেদুন্নবী জুয়েল নিহত হন। এরপর আর জেলা যুবলীগের কমিটি পুনর্বহাল না করায় তাদের দলীয় কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।
নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল নির্বাচিত হয়ে রংপুর জেলা যুবলীগ কমিটি সচল করার উদ্যোগ নেন। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ২৪ থেকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সভাপতি পদে ১৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২৩ জন জীবনবৃত্তান্ত পাঠান।
যুবলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, দুর্দিনে যারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সংগঠনের হাল ধরে রেখেছেন, নানা ত্যাগের ভেতর জেল-জুলুম সহ্য করে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। যাদের ক্লিন ইমেজ রয়েছে এবং পরীক্ষিত তাদেরই সংগঠনের মূল নেতৃত্বে আসা উচিত।
রংপুর জেলায় যুবলীগের সম্মেলন ঘিরে তৎপরতা বেড়েছে পদ প্রত্যাশী বর্তমান যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের। শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তসহ রংপুরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। বিভিন্নভাবে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর এই সম্মেলন ঘিরে সভাপতি ও সম্পাদক পদে ৪০ জনের বেশি নেতা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদের মধ্যে রংপুর কলেজের সাবেক জিএস ওয়াসিমুল বারী শিমু, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লক্ষিণ চন্দ্র রায়, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মায়া, জেলা যুবলীগের সদস্য মাসুদ রানা বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান লিউ, যুবলীগ নেতা সজিব মমতাজ, রাহেল চৌধুরী পিন্টু, যুবলীগ জেলা কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক হাসানুল কবীর তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক কামরুজ্জামান শাহিন, মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান কানন, যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. লুৎফে আরা রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, শহর ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেট আলোচনায় রয়েছেন।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতি-সম্পাদক পদে বর্তমান জেলা যুবলীগের নেতারা ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। এবারের কমিটিতে চমক আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিতর্কিত কাউকেই পদ দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
যুবলীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, যারা দীর্ঘদিন থেকে ত্যাগ স্বীকার করে মুজিব আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে এসেছেন তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়।
আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক বলেন, আশা করছি, একটি সুন্দর সম্মেলন উপহার দিতে পারব। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন নেতৃত্ব আসবে। সেই নেতৃত্ব আরও সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত হবে।