রকিব হাসান
বিশেষ প্রতিনিধি(মাদারীপুর)
মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ এর উদ্যোগে সোমবার রাতে জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গনে এক ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত মাদারীপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. রফিকুল ইসলাম, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ, জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মো. মাসুদ আলম, পাবলিক প্রসিকিউটর মো. সিদ্দিকুর রহমান সিংসহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।
জানা গেছে, তিন বছর পূর্বে মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়নের খাগদী এলাকার কুদ্দুস সরদারের ছেলে মো. মিলন সরদারের সাথে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ঘটকচর এলাকার শওকত আলীর মেয়ে সুমি আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে মিলন ও সুমির সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের কয়েকমাস পর থেকেই মিলন ও সুমির পরিবারের মধ্যে কলহ বাধতে থাকে। এক পর্যায়ে উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি হয়।
পরবর্তীতে সুমি আক্তার বাদি হয়ে মাদারীপুর আদালতে স্বামী মিলনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ সময় মিলন রাগ হয়ে সুমিকে তালাক দেয়। সুমির দায়ের করা মামলাটি সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল বৃহস্পতিবার।
ঐ দিন আসামি মিলন ও মামলার বাদি সুমি এবং তাদের এক মাত্র সন্তানসহ পরিবারের লোকজন আদালতে উপস্থিত ছিল। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণকালে ছোট একটি শিশু এজলাসের ভিতরে দৌড়া দৌড়ি করতে ছিল। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছেলেটির পরিচয় জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয় জানান যে, ঐ মামলার আসামি ও বাদির ছেলে।
চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উক্ত মামলার বাদি সুমি আক্তার এবং আসামি মিলন সরদারকে সন্তানটির দিকে বিবেচনা করো সংসার করার পরামর্শ প্রদান করেন। উক্ত পরামর্শ অনুযায়ী বাদি বিবাদী ও তাদের উভয়ের পরিবার আপোষ নিষ্পত্তির বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে উভয় পক্ষের ভুল সংশোধন করে পুনরায় সংসার করবেন মর্মে আদালতকে অঙ্গিকারনামা প্রদান করেন। উভয় পরিবারের সম্মতির ফলে বৃহস্পতিবার রাতে পুনরায় নতুন কাবিন মূলে পাঁচ লাখ টাকা দেনমহরে মিলন ও সুমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ বলেন, আদালত চলাকালে আমি জবানবন্দি নিচ্ছিলাম, তখন দেখলাম একটি শিশু এজলাসের ভিতরে দৌড়াদৌড়ি করছে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা শিশুটিকে বের করে দিচ্ছিল। আমি বললাম শিশুটি ওর মত করে থাকুক এবং জানতে চাইলাম এই শিশুটি কার? তখন জানতে পারলাম চলমান মামলার বাদি ও আসামির ছেলে। তখন বিষয়টি আমার কাছে অন্যরকম মনে হয় এবং মানবিক দিক বিবেচনা করে আমি বাদিকে জিজ্ঞাস করলাম আপনি কি বর্তমান অবস্থায় সংসার করতে রাজি আছেন। বাদি বলল জি¦ স্যার আমি সংসার করতে রাজি আছি। সাথে সাথেই আমি আসামিকেও জিজ্ঞাস করলাম আপনি কি সংসার করতে রাজি আছেন? আসামি বলল জি স্যার আমি সংসার করতে রাজি।
ঐ দিন আদালতের কাজ শেষ করে মামলার দুই আইনজীবী, বাদি ও বিবাদি পক্ষের লোকজনসহ আমার চেম্বারে বসে পুরো ঘটনা শুনলাম। তখন আমার মনে হলো দ্জুনের সামান্য ভুল বুঝাবুঝির কারনে সংসার হচ্ছে না। উভয় পরিবারের লোকজনের সাথেও কথা বললাম। তখন উভয় পরিবারের লোকজনসহ মিলন ও সুমি পুনরায় সংসার করতে রাজি হলো।
পুনরায় বিয়ের বিষয়টি গ্রামের মানুষ ভালোভাবে নিবে না বলে উভয় পরিবারের সদস্যরা বলল। তখন আমি বললাম আপনাদের বিয়ের অনুষ্ঠানটি আমরা আদালত প্রাঙ্গনে বসে করবো। এখানে জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সকল বিচারক, আপনাদের পরিবারের লোকজন ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিয়ে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবো। আজ সকলের উপস্থিতিতেই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করলাম। ভেঙে যাওয়া একটি সংসার পুনরায় একত্রিত করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত।