স্নিগ্ধা রেজা : ড. মাকসুদুল আলম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন ফরিদপুর জেলা, বর্তমানে মাদারীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা দলিলউদ্দিন আহমেদ, মা লিরিয়ান আহমেদ । মুক্তিযুদ্ধে তার পিতা শহীদ হলে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে মা লিরিয়ান আহমেদের উপর। শিক্ষকতা করে তিনি তাঁর চার ছেলে ও চার মেয়েকে গড়ে তোলেন।
গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর (১৯৭৯) ও পিএইচডি (১৯৮২) সম্পন্ন করেন। পরে জার্মানিতে ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাণরসায়নে পুনরায় পিএইচডি করেন। মস্কোতে মাকসুদ ভ্লাদিমির পেত্রোভিচ মুলাচেভের সংস্পর্শে আসেন।
পেত্রোভিচের প্রাণরসায়নের নানা শাখায় অবদান রয়েছে। জার্মানিতে তিনি কাজ করার সুযোগ পান প্রাণরসায়নের অন্য দুই দিকপাল “ডিয়েটার ওয়স্টারহেল্ট” ও “জেরাল্ড হেজেলবাউয়ের” সঙ্গে। জার্মানির পর তিনি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন বাই প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গবেষণার জন্য মাকসুদ ও তাঁর সহকর্মীদের ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয়। ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। ওই সেন্টারে কাজ করার সময় ২০০০ সালে তিনি ও তাঁর সহকর্মী “রেন্ডি লারসেন” প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিনের মতো এক নতুন ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করেন।
জিনতত্ত্ববিদ মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটাসফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা । তিনি হাওয়াইয়ান পেঁপে ও মালয়েশিয়ায় রাবারের জিন নকশাও উন্মোচন করেন।
মাকসুদুল আলম ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে কুইনস মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রয়াত হন।