মোঃ আরাফাত হোসেন:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সুমহান সংকল্পে সিপাহী ও জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে আসে। এ ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ জাতীয় সংহতির শক্তি প্রদর্শন করে স্বাধীনতার চেতনা ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় ধাবিত করে। শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র অর্থাৎ গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়। রাষ্ট্র পরিণত হয় এক ব্যক্তি শাসিত রাজার রাজ্যে, যেখানে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার রুদ্ধ হয়ে যায়। সেই বিভীষিকাময় একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে মুক্তির সুতীব্র আকাঙ্ক্ষায় সিপাহী-জনতা স্বাধীনতার ঘোষক ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম, সাহস ও নেতৃত্বের ওপর আস্থা স্থাপন করে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর এক চক্রান্তের মাধ্যমে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে বন্দি করা হলে দেশ ও জাতি চরম সংকটে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর, দেশপ্রেমিক সিপাহী ও জনতা জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করে। গণআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে জিয়াউর রহমান এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসেন, জাতিকে সংকট থেকে উদ্ধার করেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথিকৃৎ হয়ে উঠেন। তিনি সকল মত ও পথের মানুষের সন্নিবেশ ঘটিয়ে গণমানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু করেন।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন আরও বলেন, ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও সূচনা এবং ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হলেও, অরক্ষিত স্বাধীনতার কবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ৭ নভেম্বর। এ দিনটি আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তর ঘিরে আবর্তিত। কারণ এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশী জাতি উপলব্ধি করে যে, জনগণই সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের ঐক্যই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ। লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র ছিল জনগণের অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত অভিব্যক্তিস্বরূপ আইনের শাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, যার ভিত্তি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।
বাংলাদেশের জনগণ এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে, যেখানে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার হবে সহিষ্ণু, জনবান্ধব ও জবাবদিহিমূলক। শত-সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে, ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অর্জিত একবিংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক বিপ্লব আমাদের সামনে একটি বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও আইনের শাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সুযোগ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির আগামীর রাজনীতি সেই আকাক্সক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে, মানুষের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সাম্যের ভিত্তিতে একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্তের ঋণকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে এবং মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের লাখো শহীদের স্বপ্নকে ধারণ করে একটি কার্যকর, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে এগিয়ে যেতে হবে।
ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস যথাযথ মহিমায় পালন ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর অবিস্মরণীয় অবদান নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে বিএনপির ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আয়োজনে আগামী ১৬ নভেম্বর, শনিবার, চট্টগ্রামে দিনব্যাপি অনুষ্ঠিতব্য কর্মসূচি সফল করার প্রত্যয়ে আজ ১১ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার চট্টগ্রামের পচলাইশ থানার প্রবর্তক মোড়ে এক প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন এসব কথা বলেন।
প্রস্তুতি সভায় চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজিম সুমনসহ চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।