বিশেষ প্রতিনিধি:
শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি.) সকালে শারদীয় দুর্গাপূজা-১৪৩১ উদযাপন উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটা অনুষ্ঠান হলেও সারাদেশের মানুষ এর আনন্দ উপভোগ করে। এ বছর দক্ষিণ সিটিতে ১৩১ টি ও উত্তর সিটিতে ১২২টিসহ ঢাকা মহানগরে ২৫৩ টি পূজা মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীসহ সারাদেশে যাতে করে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি ভাবগম্ভীর পরিবেশে এবং যথাযথ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হতে পারে এজন্য বিভিন্ন ধাপে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পূজা মন্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের প্রতিটি পূজা মন্ডপে স্থায়ী পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি থানা পুলিশের নিজস্ব অধিক্ষেত্রে টহল ও চেকপোস্ট ব্যবস্থা এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যামেরা ও মেটাল ডিটেকটরের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আয়োজকদের মধ্যে হতে প্রতিটি পূজা মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে। সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাসহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখার পাশাপাশি প্রতিটি পূজা মন্ডপে আনসার বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করবেন। একই সাথে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ র্যা ব ফোর্সেস বাহিনী তাদের টহল কার্যক্রম ও অন্যান্য নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। পূজার দিনগুলোতে আগত ভক্ত মন্ডলীদের চেকপোস্টে কর্মরত পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
পূজায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার বলেন, পূজার দিনগুলোতে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা রাখা হয়েছে। তবে পুরান ঢাকার দিকে রাস্তা সরু হওয়ার কারণে সেখানে যান চলাচলে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে। এজন্য আমরা পূজা উদযাপন কমিটিকে অনুরোধ করেছি, পূজা মন্ডপের কাছাকাছি যেন কোন মেলা বা জনসমাবেশ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করার জন্য।
কমিশনার বলেন, ১৩ই অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাৎসব শেষ হবে। এজন্য পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা নদী, ওয়াইজঘাট, ডেমরা শীতলক্ষা নদীসহ ১৫ টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। বিসর্জন শোভাযাত্রাতেও পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। এজন্য নৌ পুলিশ ফায়ার ব্রিগেডসহ অন্যান্যরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ৯৯৯ এর মাধ্যমেও সেবা গ্রহণ করা যাবে।
বিসর্জনের সকল কার্যক্রম সন্ধ্যা সাত ঘটিকার মধ্যে সম্পাদনের অনুরোধ করে কমিশনার বলেন, পূজা মন্ডপ, বিসর্জন শোভাযাত্রা ও বিসর্জনের সময় সকল প্রকার মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ। একই সাথে পটকা ও আতশবাজির ব্যবহার না করার অনুরোধ করেন তিনি। বিসর্জন শোভাযাত্রায় উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম না ব্যবহার করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি। যারা সাঁতার জানেন না তাদেরকে পানিতে না নামার জন্য অনুরোধ করেন কমিশনার।
বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, আমরা আশা করছি এ বছর পূজা উৎসব অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বাধাবিঘ্ন ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে ডিএমপির সিটিটিসির সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল টিম ও কে-নাইন টিম উদ্ভুত জরুরী পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে তার একটা মহড়া প্রদর্শন করে।
এসময় পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দসহ ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোঃ ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান পিপিএম-বার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মোঃ শওকত আলী; ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।