রফিকুল ইসলাম রফিক,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
খুন করার অপরাধে ২৬ বছর ২ মাস সাজা ভোগ করেন রংপুরের মঞ্জুর আলম। ৩৪ বছর বয়সে স্ত্রী আর দুই ছেলেকে রেখে কারাগারের জীবন শুরু হয় তার।
২৬ বছর সাজা ভোগের পর অসহায় মঞ্জুর আলমের পাশে দাঁড়ালেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ। তিনি বলেন, ‘তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জেনে আমরা চেয়েছি তিনি কাজের মধ্যে থেকে সংসারে উপার্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী থাকুন। তাই জেলা প্রশাসন থেকে তাকে ৪০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল রংপুর পৌরসভার হাবীবনগর এলাকার মঞ্জুর আলমকে। সাজা শেষে গত ১১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলা কারাগার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পান। দীর্ঘদিন পর বাইরে বের হয়ে কী করবেন সেই বিষয় নিয়ে হতাশ ছিলেন মঞ্জুর আলম। বাড়িতে গিয়ে অভাবের সংসারে ঢুকে কোনো আনন্দই পাননি বলে জানান তিনি। দীর্ঘ বছর পর স্ত্রী-সন্তানদের দেখে তার মনে কোনো উচ্ছ্বাস জাগেনি। একটা ঘোরের মধ্যেই যেন বিচরণ করছেন মঞ্জুর।
মন্জুর অসহায়ত্বের কথা জেনে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য পাশে দাঁড়ান। তিনি কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন মঞ্জুর আলম জেলখানায় দীর্ঘ সময় ধরে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করতেন। তার বড় ছেলে সুরুজ আলম রংপুর ট্রাক স্ট্যান্ডে একই কাজ করেন।
উল্লেখ্য, জমিজমা নিয়ে বিবাদের জেরে প্রতিবেশীকে খুন করার অপরাধে ২৬ বছর ২ মাস সাজা ভোগ করেন রংপুরের মঞ্জুর আলম। ৩৪ বছর বয়সে স্ত্রী আর দুই ছেলেকে রেখে কারাভোগের জীবন শুরু হয় তার।
বর্তমানে মঞ্জুরের বয়স ৬০ বছর। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে এসে চমকে যান মঞ্জুর আলম। সব কিছুই পাল্টে গেছে, তবে থমকে আছে শুধু তার ফেলে আসা স্মৃতিময় ২৬টি বছর।
মঞ্জুর আলম জানালেন, ‘জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়ে বাইরে বের হয়ে প্রথমে আতঙ্ক অনুভব করি। বাইরে এত লোকসমাগম, বাড়ি-ঘর, যানবাহন দেখে চমকে উঠেছি। যখন জেলখানায় ঢুকি তখন রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে একটা গাড়ি আরেকটা গাড়িকে পাশ কাটাতে পারত না। এখন দেখি বিশাল রাস্তা হয়েছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ভয় লাগে।’
ছেলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিতে জেলা প্রশাসক সোমবার সকালে মঞ্জুর আলমকে ৪০ হাজার ৭৬০ টাকার উপকরণ কিনে দেন। যার মধ্যে রয়েছে ড্রিল মেশিন, ওয়েল্ডিং মেশিন, রিং-ডাল সেট, স্লাইড মেশিনসহ অন্য উপকরণ।
কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার আবু সায়েম বলেন, ‘মঞ্জুর আলম খুব সাদাসিধেভাবে থাকতেন। তিনি রান্নাবান্না করা, হস্তশিল্পের কাজ, ইলেকট্রিসিটি ও প্লাম্বারের কাজ জানতেন। তাকে বিভিন্ন কাজে পাওয়ায় যেত। সে রংপুর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলে অবস্থান করার পর শেষ সময়টিতে কুড়িগ্রাম কারাগারে কাটিয়েছেন।’
কুড়িগ্রাম জেল সুপার সফিকুল আলম জানান, ‘মঞ্জুর আলম সাজা ভোগের পর মুক্তি পেয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাইরের দুনিয়ায় গিয়ে কি কাজ করবেন এ নিয়ে। তার মতো অসহায় লোকের পাশে জেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ায় আমরা খুবই খুশি।’
মঞ্জুর আলমের ছেলে সুরুজ আলম জানায়, বাবাকে পেয়ে তারা খুবই খুশি। ‘বাবার মধ্যে অনেকটা পরিবর্তন এসেছে। বেশিরভাগ সময় তিনি আনমনা হয়ে থাকেন। তার স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। আমরা দুভাই বাবাকে দেখে শুনে রাখছি।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘তার পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জেনে আমরা চেয়েছি তিনি কাজের মধ্যে থেকে সংসারে উপার্জনের মাধ্যমে কর্মমুখী থাকুন। সে কারনে তাকে ৪০ হাজার টাকার উপকরণ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয়েছে।