মোস্তাফিজার রহমান রংপুর প্রতিনিধি:
আটকে রাখা রেজাল্ট প্রকাশের দাবিতে আমরণ অনশনে নেমেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে অনশনে বসেছেন ওই বিভাগের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী শামীম ইসলাম প্রথম বর্ষে ২য় সেমিস্টারে থাকা অবস্থায় কম্পিউটার ইন্ট্রোডাকশন টু কম্পিউটার নামক কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফলে অকৃতকার্য হন। কিন্তু মোট সিজিপিএতে তিনি উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা দিতে থাকেন। এরমধ্যে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনাকে প্রধান করে একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি সবকিছু যাচাই-বাছাই করে বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীকে উক্ত কোর্সে উত্তীর্ণ হওয়ার সুপারিশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গ্রহণ না করে আবারো তদন্ত কমিটি গঠন করে। এদিকে এ বছর ৭ ফেব্রুয়ারি অনার্স চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারের রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা যায় শামীম ইসলামের রেজাল্ট ‘উইথ হেল্ড’ করে রাখা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী বিভাগে যেয়ে সমাধান না পেয়ে উপাচার্যের কাছে যান। উপাচার্যও তার কথা না শুনে খারাপ আচরণ করেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শামীম ইসলাম বলেন, আমার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। আমার শিক্ষাজীবনে লিখিত পরীক্ষায় আমি কখনো কোন বিষয়ে ফেল করিনি। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বর্ষের ২য় সেমিস্টারের সবগুলো পরীক্ষা ভালো হয়। কিন্তু কম্পিউটার কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষাতে কোন কারণে ফেইল আসলেও ফলাফলে মোট সিজিপিএতে উত্তীর্ণ হই। আমি চেয়েছিলাম পরের বছর ওই পরীক্ষায় ইমপ্রুভমেন্ট দেব। পরের বছর যোগাযোগ করা হলে আমাকে জানানো হয় ব্যবহারিক পরীক্ষার মানোন্নয়ন হয় না। পরে বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে তারা কমিটি গঠন করে। এদিক অনার্সের চতুর্থ বর্ষের শেষ সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশিত হলে আমার ফলাফল ‘উইথ হেল্ড’ করে রাখা হয়। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য ড. হাসিবুর স্যারের কাছে গেলে তিনি খারাপ আচরণ করেন। ফলে বাধ্য হয়ে বন্ধুদের নিয়ে অনশনে বসেছি। আমার মানসিক অবস্থা ভালো না। আমার বন্ধুরা অনার্সের ফলাফল পেয়ে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় আবেদন করছে কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। ফলে বাধ্য হয়ে আমি আমরণ অনশনে বসেছি।
তথ্য অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বলেন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীমের বিষয়ে আমাকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি শিক্ষার্থী নিজেও অমনযোগী ছিল, সিলেবাসেও নির্দিষ্ট করে লেখা নেই ওই কোর্সটি ব্যবহারিক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকেও বিষয়টি ভালোভাবে লক্ষ্য না করে ফলাফল উত্তীর্ণ দেখায়। গোটা সিস্টেমেই গ্যাপ থাকায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। তাই শিক্ষার্থীর কথা ভেবে আমরা বিশেষ পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেমিস্টারে কোনো একটি কোর্সে ফেইল থাকলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম ইসলামের ১ম বর্ষের একটি ব্যবহারিক কোর্সে ফেইল থাকায় সে রেজাল্ট পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আগামী সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তারা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেবে। এরপর বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে তার রেজাল্ট প্রকাশ করা হবে। আমি আশ্বস্ত করেছি তারা মানছে না। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ওই শিক্ষার্থীর ফলাফলের বিষয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে আমি পদক্ষেপ নেব। এই সপ্তাহের ভেতর বিষয়টি বলতে পারব। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রক্টর কাজ করছে।