শহিদুল ইসলাম (শাহেদ)
টুর্নামেন্টের ফাইনাল যতটা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হওয়ার কথা, তেমনই হয়েছে মেয়েদের প্রথম করপোরেট কাবাডি লিগের ফাইনালে। জাতীয় কাবাডি স্টেডিয়ামে ৩১ই জানুয়ারী (মঙ্গলবার) তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে ৬ সেকেন্ড বাকি থাকতে ২৩-২২ পয়েন্টে টেকনো মিডিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা টুয়েলভ। প্রথমার্ধে ১৪-১২ পয়েন্টে চ্যাম্পিয়নরা এগিয়ে থাকলেও সময় বাড়ার সাথে দারুণভাবে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় টেকনো মিডিয়া। সাত মিনিটের মধ্যে ১০-১ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়া টেকনো মিডিয়া প্রথমার্ধ শেষ করে ১২-১৪ পয়েন্টে। জাতীয় দলের সাবেক দুই খেলোয়াড় অধিনায়ক স্মৃতি আক্তার ও কচি রানী মন্ডলের নৈপূণ্যে ২৯ মিনিট পর্যন্ত খেলা শেষ হয় ২২-২২ পয়েন্টে। ১১ সেকেন্ড বাকি থাকতে টেকনো মিডিয়ার সোমা রেইড দিয়ে ফেরার পথে পারসু করেন ঢাকা টুয়েলভের অধিনায়ক রেখা আক্তার। সোমা নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও রেখার হাত ছুঁয়ে যায় আসর সেরা ক্যাচার রুপালী আক্তারকে। রেখা নিজের কোর্টে ফিরে আসতেই ঢাকা টুয়েলভের চ্যাম্পিয়ন উৎসব শুরু। ফাইনাল শেষে রেখা আক্তার জানান, ‘ম্যাচের শেষ দিকে আমাদের মনোযোগ ধরে রাখতে পারছিলাম না। আমাদের মধ্যে কিছুটা হতাশা ও ভয় করেছিল। কিন্তু আল্লাহ সহায় ছিল বলে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ রেইড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।’
ফাইনালে হারলেও অখুশি না টেকনো মিডিয়ার অধিনায়ক স্মৃতি আক্তার, তিনি জানান, এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচ আগে কখনো আমরা খেলিনি। ফেডারেশনের কাছে আমাদের অনুরোধ এই ক্যাম্পটা নিয়মিত না হোক অন্তত ২-৩ মাস পর পর যেন হয়। প্রথম পর্বে টানা ৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকা ব্রিজ ফার্মা লিমিটেডের দলটিকে প্রথম হারের স্বাদ দিয়েছিল টেকনো মিডিয়াই।
ঢাকা টুয়েলভের স্মৃতি আক্তার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়, আনজুআরা রাত্রি সেরা রেইডার, বজলুর রহমান সেরা কোচ এবং টেকনো মিডিয়ার রুপালী আক্তার সেরা ক্যাচার নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়েদের প্রথম করপোরেট লিগে তৃতীয় হয়েছে নরসিংদী লিজেন্ডস।
খেলা শেষে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ও কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম এর সভাপতিত্বে চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদ, কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এবং যুগ্ম-সম্পাদক ও অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেভেলপমেন্ট) গাজী মোজাম্মেল হক।
প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ফাইনালে নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছি। সমাজের বেড়াজাল উপেক্ষা করে মেয়েরা খেলতে এসেছে, তাদের অভিনন্দন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নারীরা একদিন মহাকাশেও যাবে।’
কাবাডি ফেডারেশনের সভাপতি ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ পুলিশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে কাবাডিকে জাতীয় খেলা ঘোষণা করেছেন। আমরা খেলাটাকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের ছেলেরা ইরানে যুব বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। বিদেশি কোচের অধীনে আবাসিক ক্যাম্প চলছে। কাবাডি খেলোয়াড়দের উন্নয়নের জন্য বিকেএসপিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, সারাদেশ থেকে ৫০ হাজার নারী খেলোয়াড়ের মধ্য থেকে বাছাই করে ১০০ জনকে আবাসিক ক্যাম্পে এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে করপোরেট মহিলা কাবাডি লিগ আয়োজন করা হয়েছে। করপোরেট মহিলা কাবাডি লিগ দেশের নারী কাবাডির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।’