শহিদুল ইসলাম (শাহেদ)
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেছেন, আমরা বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছি। সে স্বপ্ন পূরণে কৃতি শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।
আইজিপি আজ সকালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত সদস্যবৃন্দের কৃতি সন্তানদের ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেধাবৃত্তি-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহবান জানান।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য রাখেন এআইজি (এডুকেশন, স্পোর্টস অ্যান্ড কালচার) মোঃ সোহেল রানা পিপিএম। কৃতি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাডিশনাল ডিআইজি শাহীনা আমীন এবং ডিএমপির এডিসি এ বি এম জাকির হোসেন। বৃত্তিপ্রাপ্ত মেধাবী সন্তানদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জনকারী মোঃ আবুল হাসনাত ও নাজিয়া মুমতাহিনা এবং এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের অধিকারী মল্লিক ফাইজ ইসলাম মিহান ও ফারজানা হক প্রমি বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং কৃতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এদেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের। মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজের মধ্যে দেশপ্রেম থাকলে দেশের বাইরে থাকলেও দেশের জন্য নিবেদিত হয়ে দায়িত্ব পালন করা যায়। দেশ যদি উন্নত হয়, সমৃদ্ধ হয় তাহলে তোমাদের সাফল্য, মা-বাবার কষ্ট সফল হবে। তোমরা ভালো রেজাল্ট করে মা-বাবার মুখ যেমন উজ্জ্বল করেছ, তেমনি দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার ক্ষেত্রেও তোমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে।
পুলিশ প্রধান বলেন, তোমাদের জ্ঞান শুধু পাঠ্য বইয়ে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের বই পড়তে হবে। তিনি বলেন, ডিজিটালাইজেশনের কারণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যবহার বাড়ছে। মোবাইল দিয়ে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ডিজিটাল ডিভাইস অবশ্যই ব্যবহার করব। কিন্তু এর মধ্যে হারিয়ে যাবো না।
তিনি বলেন, জীবনে ব্যর্থতা আসতে পারে। সব কাজে সফলতা আসবে এমন নয়। এজন্য দমে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সবার মাঝে অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। নিজেদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, জীবনের যে কোনো পর্যায়ে সাফল্য আসতে পারে। আমরা ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না, আমরা সফল হতে চাই। আমরা অন্যের কাছে অনুপ্রেরণা হবো, যাতে অন্যরা আমাদের দেখে শিখতে পারে।
তিনি বলেন, করোনাকালে যখন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে তখন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে নিজের বেঁচে থাকার জন্য মা-বাবাকেও সন্তানকে ছেড়ে চলে যেতে আমরা দেখেছি। সন্তান অনেক সময় মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যায়, তাদেরকে পরিত্যাগ করে। সাধারণত মা-বাবা সন্তানকে ছেড়ে চলে যায়, এ রকম আমরা দেখিনা। এ অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশ পুলিশ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদেরকে সেবা দিয়েছে, মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়েছে, দাফন-কাফন করেছে। এ বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে পুলিশ মানুষের ভালোবাসার অর্জন করেছে, আস্থা অর্জন করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মোঃ কামরুল আহসান বিপিএম (বার) বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন কৃতি সন্তান হিসেবে তোমাদেরকে সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একটি বৃহৎ পরিবার। তোমরা ভালো রেজাল্ট করে তোমাদের মা-বাবার সম্মান যেভাবে বৃদ্ধি করেছ তেমনি বাংলাদেশ পুলিশেরও গৌরব বাড়িয়েছ। আজকের মেধাবৃত্তি তোমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমরা তোমাদেরকে অনেক উঁচুতে দেখতে চাই।
তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও খেলাধুলা এবং অন্যান্য সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে তোমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে।
পরে প্রধান অতিথি মেধাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও নগদ অর্থ তুলে দেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৭৭৭ জন এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৬০২ জনসহ মোট ১ হাজার ৩৭৯ জন মেধাবৃত্তি পেয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় এসএসসি পরীক্ষায় ১৫০ জন এবং এসএসসি পরীক্ষায় ১০২ জনসহ মোট ২৫২ জনকে মেধাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।