(দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
অপো রানী হত্যাকান্ডের ৯৬ দিন আজ। এখন পর্যন্ত ধরা পড়েনি কেহ। বিচারের জন্য প্রশাসন ও মানুষের দ্বারেদ্বারে মথুরা।
গত ২৯ জুলাই দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার টংগুয়া গ্রামের কুমারপাড়ায় পিতা মথুরা চন্দ্র রায়ের মেয়ে নিজ বাড়ি (বাবার) বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পথে ইপিজেড কর্মী অপো রানী বালা দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হন এবং তার দশ বছরের মেয়ে বিপাশা রায়কেও করা হয় মানুষিক নির্যাতন। ছিনিয়ে নেওয়া হয় ৭ মাসের অবুঝ শিশু বনলতার মাতৃ স্নেহ ভালোবাসা।
এর পরেই ফুসে ওঠে এলাকাবাসী, শুরু হয় নানান আন্দোলন। ২ অগাষ্ট হত্যা ও নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন, এলাকাবাসী। তার ধারাবাহিকতায় ৮ ও ১১ অগাষ্ট এই মর্মান্তিক ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের দাবিতে পাকেরহাট ও টংগুয়া বাজারে পথসভা করেন, সংবাদকর্মী আজিজার রহমান। এরপরই প্রতিবাদের ঝড় উঠে উপজেলা জুড়ে।
২২ আগস্ট সোমবার সকালে উপজেলা পরিষদের চত্বরে সামনে নামে হাজারো মানুষের ঢল। একত্রিত হয় টংগুয়া এলাকার লোকজন, পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিষ্টান যুব ঐক্য পরিষদ, ছাত্র ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও মন্দিরের ব্যানারে দুই ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করা হচ্ছে। আমাদের বাড়িঘর লুটপাট করে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। আজকে আমাদের অপো রানীকে গণধর্ষণ করে নির্মমভাবে হত্যার করা হলেও পুলিশ প্রশাসন নিরব। এখন পর্যন্ত তারা একজন অপরাধীকেও শনাক্ত করতে পারেননি। আমরা সঠিক বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমেছি। যদি অতি দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি না দেয়া হয় তাহলে আরও কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলবো। পদ্মা সেতুর একটি নাট-বল্টু খুললে দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থা রাস্তায় নামে কিন্তু একজন একজন হিন্দু নারী ধর্ষণ হলে পুলিশ তার কুলকিনারা খুজে পায় না, এটা কতটা হাস্যকর হতে পারে আমাদের সমাজে। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা করেন।
এছাড়াও ৩০ সেপ্টেম্বর কাচিনীয়া বাজারে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী।
মানুষ কতটুকু ব্যথিত হলে উৎসব বর্জন করে!
যখন সারাদেশে শারদীয় দূর্গা উৎসব তখন বর্জনের পাশাপাশি মন্দিরের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন করেছেন তারা ঐ এলাকাবাসী। এ সবের কেন্দ্র বিন্দু হলো উপো বালা হত্যাকান্ড। এছাড়াও ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ শীর্ষক সহিংসতাবিরোধী স্লোগান লেখা ব্যানার টাঙানো হয় মন্দির চত্ত্বরে।
এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পরে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। এ ঘটনার ৯৬ দিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত এ মামলার রহস্য উন্মোচন হয়নি।
এ বিষয়ে নিহতের বাবা মথুরা বলেন, বিষয়টা নিয়ে নানান তাল-বাহানা করছেন পুলিশ প্রশাসন ও তদন্তকারীরা। আমার মেয়ের বিচারের দাবিতে আমি মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরছি। এটা কেমন সমাজ! যে সমাজে অন্যায়কারীরা পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে চলে।
লাশ উদ্ধারের ৯৬ দিনেও রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় ফুঁসে উঠেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।