মোস্তাফিজার রহমান
রংপুর প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটে চাপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। সে কারণে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে চাপাতা বিক্রি করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘসময় পরিবহনের ফলে পাতার গুণগতমান 'নষ্ট' হওয়ায় লালমনিরহাটের চাষিরা চা কোম্পানির কাছে ছাড়ে কাঁচা চাপাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে চাপাতার দাম নিয়ে চাষিরা হতাশ।
৫০ শতাংশ ছাড়ে চাপাতা বিক্রি করছেন চাষিরা
বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাট আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ২০১৬ সাল থেকে চা চাষ শুরু হয়। ২১০ একর জমিতে ১১৬ জন চাষি চা চাষ করেন। জেলাজুড়ে ১২৫টি চা বাগান থেকে প্রতিমাসে ৭০ হাজার কেজি করে কাঁচা পাতা উৎপাদন হচ্ছে। গত বছর এ জেলায় ৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি কাঁচা পাতা উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার কেজি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ কেজি পাতা বিক্রি হয়েছে। তবে দিন দিন পাতার উৎপাদন বাড়লেও লালমনিরহাটের চা চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছেন না। লালমনিরহাটে চাপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রতিষ্ঠান না থাকায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। ফলে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে চা কোম্পানির কাছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাপাতা বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলার চা চাষি তৈমুর হাসান ডিকো বলেন, ‘অনেক দূর থেকে চাপাতা পরিবহন করায় গুণগতমান নষ্ট হয়। আমাদের উৎপাদিত চাপাতা ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করতে হয়। ছাড়, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে আমরা প্রতি কেজি চাপাতা বিক্রি করে পাচ্ছি ৪ টাকা। ডিজেল তেল, সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় আমরা এখন পুঁজি তুলতে পারছি না।’একই উপজেলার আরেক চাষি রবি মোল্লা বলেন, ‘বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাট অফিসের প্রকল্প পরিচালক আরিফ খানের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় ২০১৬ সালে চা চাষ শুরু করি। গত বছর প্রতি কেজি কাঁচা চাপাতা ২২ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলাম। এতে লাভ হয়েছিল। চলতি বছর প্রতি কেজি চাপাতা ২০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ১০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি করতে হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো একসময় চা বাগান নষ্ট করে এই জমিতে অন্য কোনো ফসলের আবাদ শুরু করতে হবে।’চা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলার চাষি তৈয়েবুর রহমান বলেন, এখানে যদি চাপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান থাকত, তাহলে পাতা পরিবহন খরচ হতো না। পাতার গুণগতমানও নষ্ট হতো না। পরিবহন খরচ ও ছাড়ের কারণে প্রতি কেজি চা পাতায় ৬ টাকা খরচ হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতি কেজি চাপাতা ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পারলে আশানুরূপ মুনাফা হতো। বাজারদর এ রকম থাকলে ২ একর জমির চাগাছ কেটে ভুট্টা ও অন্য ফসল চাষ করার কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের লালমনিরহাট আঞ্চলিক অফিসের প্রকল্প পরিচালক আরিফ খান বলেন, পরিবহন খরচ ও ছাড় দিয়ে কাঁচা চাপাতা বিক্রি করায় লালমনিরহাটের চা চাষিরা কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছেন না। প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পথ পরিবহন করায় চাপাতা রাস্তায় জ্বলে যায়। এতে পাতার গুণগতমান ঠিক থাকে না। এ কারণে ছাড়ে এসব পাতা বিক্রি করতে হয়। তবে এসব সমস্যা থাকবে না যদি লালমনিরহাটে একটি চাপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যায়। তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য প্রাধান্য দিচ্ছি। এ ছাড়া এ অঞ্চলে চাপাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ চা বোর্ড খুব গুরুত্বেও সঙ্গে চেষ্টা করছে।’
প্রকাশক : শহিদুল ইসলাম
সম্পাদক : এম,এস,এ রেজা
প্রকাশক : 01746808322
সম্পাদক : 01712340047
ইমেইল : dailyajkersongram@gmail.com
Copyright © 2024 দৈনিক আজকের সংগ্রাম. All rights reserved.