নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নাদিরা বেগমের বয়স ৫৩। পাঁচ বছর আগে স্বামী মো. রুহুল আমিন আত্মহত্যা করেন। এর পর থেকে দুই মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও মারিয়াম জ্বীমকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন নাদিরা। কোনোরকমে সংসার চালিয়ে বড় মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের বিয়ে দেন তিনি। বড় মেয়ে জান্নাতুল নিরাপত্তার কথা ভেবে ছোট বোন মারিয়ামকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। এতে একা হয়ে পড়েন মা নাদিরা। এর পর থেকেই দুই মেয়ে মাকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেন, মাকে বিয়ে দেবেন। এতে মা একজন সঙ্গী পাবেন এবং নতুন সংসারে বাকি জীবনটা ব্যস্ততায় কাটাতে পারবেন। ব্যস, যেই ভাবনা, সেই কাজ। মাত্র দুই মাসের চেষ্টায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সী মো. হান্নান খানের সঙ্গে নাদিরা বেগমের বিয়ে দিয়েছেন মেয়েরা।
এ বিয়েতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌসের স্বামী মাহমুদুল ইসলাম। কেবল তা–ই নয়, তিনি শাশুড়ির বিয়েতে উকিল বাবার ভূমিকায় ছিলেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরে স্বপ্ননগর আবাসিক এলাকায় মাহমুদুল ইসলাম আর জান্নাতুল ফেরদৌসের বাসায় বসে কথা হয় নাদিরা-হান্নান দম্পতির সঙ্গে। এ বাসাতেই পরিবারের সদস্য, কাছের বন্ধুবান্ধবের উপস্থিতিতে এই দম্পতির বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর মিরপুরে স্বামীকে নিয়ে নাদিরা বেগম চলে গেছেন তাঁর বাসায়।
মায়ের বিয়ে প্রসঙ্গে নাদিরা বেগমের মেয়েরা বললেন, ‘আমরা আমাদের মায়ের বিয়ে দিলাম।’ পাশ থেকে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘আর আমি তো এ বিয়ের উকিল বাবা, আমার দায়িত্ব তো আরও বেশি।’ নতুন বর মো. হান্নান খান মাহমুদুল ইসলাম ও জান্নাতুল ফেরদৌসকে আব্বা ও আম্মা বলেই সম্বোধন করছিলেন। বললেন, ‘ওনারা তো উকিল মা–বাবা, সম্মান তো করতেই হবে।’
বিয়ের দিন উকিল বাবা মাহমুদুল হাসান আংটি বদলে সহায়তা করছেন।
বিয়ের দিন উকিল বাবা মাহমুদুল হাসান আংটি বদলে সহায়তা করছেন। ছবি: সংগৃহীত
এর আগে নাদিরা বেগম ২৮ বছর সংসার করেছেন। আর নতুন বিয়ের পর পার হয়েছে মাত্র ছয় দিন। নাদিরা বেগম ও হান্নান খান নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই ফাঁকে দুজন দুজনকে চিনতে-বুঝতে সময় নিচ্ছেন। তবে দুজনই হাসিমুখে বললেন, তাঁরা সঙ্গী নির্বাচনে ভুল করেননি। এ বয়সে এসে তাঁরা চেয়েছিলেন, জীবনসঙ্গী যেন ভালো মানুষ হন, সে বিষয়ে তাঁদের মধ্যে এখন আর কোনো দ্বিধা নেই।
নাদিরা বেগম অকপটে বললেন, স্বামী হান্নান খান সহজে রেগে যান না, পান-সিগারেটের নেশা নেই। তাঁর মুচকি হাসি খুব ভালো লেগেছে। আর পাশ থেকে হান্নান খান মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, নাদিরা বেগমের অকপটে কথা বলাটাই তাঁর বেশি পছন্দ।
সামাজিক, পারিবারিক বাস্তবতায় মায়ের নতুন করে বিয়ে দেওয়া বা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না। জান্নাতুল ফেরদৌস ও স্বামী মাহমুদুলকে তাই এ নিয়ে বিস্তর ভাবতে হয়েছে। অবশেষে দুজন নিঃসঙ্গ মানুষকে এক করতে পেরে তাঁরা আনন্দিত। মায়ের বিয়ের পর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেবেন কি না, তা নিয়েও অনেক ভেবেছেন জান্নাতুল। তবে সবাইকে তথ্যটি জানানোর জন্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে এত বেশি ইতিবাচক প্রচার দেখে নিজেরাই অবাক হয়েছেন।